ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

কক্সবাজারে ২১৭ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাঠে না থাকার অভিযোগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারে ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকের সাথে কথা বলে তাঁদের সমস্যার কথা শোনবে এমনটাই নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু তারা মাঠে না গিয়ে নিজেদের ব্যাকক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন এমন অভিযোগ উঠেছে। আবার অফিসেও ঠিক মতো বসেন না তারা। এমনকি বেশির ভাগ এলাকার কৃষকেরা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের চেনেনও না। অনেক ইউপি চেয়ারম্যানের চোখেও পড়েননি এসব ব্লক সুপারভাইজার। ফলে সবজি ও ফসল চাষাবাদে তাদের পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।

ভুক্তভোগী চাষিরা জানিয়েছেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা মেলেনা বললেই চলে। কারেন্ট পোকার আক্রমণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়লেও কৃষি কর্মকর্তারা এসব খবর জানেন না। বিশেষ করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে না যাওয়াতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে ক্ষেতকে রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকায় তারা ইচ্ছামতো দায়িত্বে অবহেলা করছেন।

জানা যায, কক্সবাজারের ৭১ টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় ২১৭ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে তিন ওয়ার্ড মিলে একজন দায়িত্ব পালন করবেন এবং পৌরসভায় একজন করে দায়িত্ব পালন করছেন।

সপ্তাহের ৪ দিন তাদের মাঠে থাকার কথা। খাতা কলমে তারা বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্ব ভাগ করা আছে। সরকারি নির্দেশনায় রয়েছে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ফসলের মাঠে গিয়ে চাষিদের ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেবেন। কিন্তু তারা তা না করে নিজের পরিবার ও ব্যক্তিগত কাজে সময় দেয়। শুধু তাই নয়, কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রদর্শনী কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত নির্দিষ্ট পরিমানের সার কৃষকদের না দিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। আর-ও অভিযোগ পাওয়া যায়, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সরঞ্জামাদী রাখার ঘরকে অনেক উপসহকারী নিজেদের বাসস্থান বানিয়ে রেখেছেন।

পেকুয়া, চকরিয়া, রামুসহ উপজেলার কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন, সবজির জন্য বিখ্যাত রামু ও চকরিয়া। এখানে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এসব সবজি উৎপাদনে কোনো সহায়তা বা পরামর্শ কিছুই পাননা। তারা মাঠে এসে কোন চাষিকে পরামর্শ দেন না।

চকরিয়া কাকরা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের, শাহজাহান, দুদু মিয়া, আবুল কাশেম, নজির আহমেদসহ অনেকে জানান, গত ৬ মাসে একবারও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের চোখে দেখেননি।

চাষীরা জানান, জেলায় গত বছর তিনটি ঘুর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। হাজার হাজার কৃষকের কয়েকশো কোটি টাকার ফলন নষ্ট হয়ে যায়। এমন দূর্দিনেও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে আসেননি। চলতি আমন মৌসুমেও কারেন্ট পোকার আক্রমণে অনেক চাষীর ক্ষতি হয়েছে। শীতকালীন সবজি ক্ষেতেও পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। কিন্তু পরামর্শ দিতে আসেনি কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সময়ের অধিকাংশ সময় তালাবন্ধ থাকে অফিস। দায়িত্ব ফেলে তারা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন।

এই বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর) খামারবাড়ি) উপপরিচালক মো কবির হেসেন  জানান, সপ্তাহের ৪ দিন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে মাঠে গিয়ে চাষিদের সাথে কথা বলবেন। একদিন উপজেলায় মিটিং’এ অংশ নেবেন। এভাবেই তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তিনি বলেন, কৃষকেরা যদি তাদের কর্মক্ষেত্রে না থাকার অভিযোগ করেন এবং এর সত্যতা মিললে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত: